শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
পিরোজপুর শিক্ষককে হাতুড়িপেটা, বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার কাউখালীতে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান উপলক্ষে জনসচেতনতা ও প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত ভান্ডারিয়ায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা পিরোজপুরে হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন নেছারাবাদে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লোহার পুল ও প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মঠবাড়িয়ায় ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল গৃহবধূর লাশ, স্বামী ও শ্বশুর আটক পিরোজপুর জেলা বিএনপির আংশিক আহবায়ক কমিটি ঘোষণা কাউখালীতে মন্ডপগুলোতে চলছে দুর্গা পূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান নেছারাবাদে ২৬ জন শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা পিরোজপুরে পিয়ার পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল ভান্ডারিয়ায় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নদীতে জাল ফেলছে জেলেরা! মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ পিরোজপুর ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এর কমিটি গঠন: সোহাগ সভাপতি, মিঠু সম্পাদক কাউখালীতে অপহরণের তিন মাস পর সপ্তম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী উদ্ধার কাউখালীতে জেলের মরদেহ উদ্ধার ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারীকে প্রাণ নাশের হুমকির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ভাণ্ডারিয়া শাহাবুদ্দিন কামিল মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণীর প্রথম ক্লাস উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা ভাণ্ডারিয়ার চাঞ্চল্যকর আসমা হত্যার বিচার দাবিতে পিরোজপুরে মানববন্ধন কাউখালীতে ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত মঠবাড়িয়ায় বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে গ্রেফতার
আক্কাস সিকদারের “ভয়ঙ্কর সাম্রাজ্যে” ঝালকাঠির সাংবাদিকরা বড়ই অসহায়

আক্কাস সিকদারের “ভয়ঙ্কর সাম্রাজ্যে” ঝালকাঠির সাংবাদিকরা বড়ই অসহায়

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক : উকিল হয়েও নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে দাবিদার আক্কাস সিকদার সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার সংগঠন প্রেসক্লাবের সম্পাদক। অথচ তিনিই পদে পদে সাংবাদিকদের হয়রানি আর হামলা-মামলায় পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিকদের কোনো প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত অপরাধীর পক্ষ নিয়ে এই আক্কাস সিকদার নানারকম ফন্দিফিকির চালিয়ে থাকেন। শুরুতেই টার্গেট করা সাংবাদিকের পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের কার্যালয়ে নামে বেনামে নানা কল্পিত অভিযোগ পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মিকে চাকুরিচ্যুত করার পাঁয়তারা চালানো হয়। এরপর ভুক্তভোগী সাজিয়ে থানায় কিংবা আদালতে দায়ের করা হয় মামলা। প্রেসক্লাব সম্পাদক হিসেবে এসব হয়রানির নেপথ্যের ইন্ধনদাতা হন তিনি। নানা পদ পদবীর একাধিক পরিচিতি ব্যবহার করে ‘বহুরুপী আক্কাস সিকদার’ বিভিন্ন সময়ে ঝালকাঠির ডজনখানেক সাংবাদিককে হেনস্থা, মামলা, হামলা, পত্রিকাচ্যুত করেছেন আককাস সিকদার। বাদ পড়েনি জুনিয়র-সিনিয়র কেউ। তার সিদ্ধান্তের বাইরে গেলেই প্রেসক্লাবের সদস্যপদ পর্যন্ত হারাতে হয়েছে অনেককে। সাংবাদিক কাম উকিল পরিচয়ের আক্কাস সিকদারের ভয়ঙ্কর অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে এরইমধ্যে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা প্রেস কাউন্সিল, বার কাউন্সিল, আইনজীবি সমিতি ও ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন। ভুক্তভোগিদের পক্ষে দৈনিক ভোরের সময় ও আমাদের বরিশাল পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি বশির আহম্মেদ খলিফা সাক্ষরিত অভিযোগপত্রে আক্কাস সিকদারের নানা অপকর্মের বিস্তারিত ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়।

আক্কাস সিকদারের সাম্রাজ্যে সবাই অসহায়

ঝালকাঠি শহরের উপজেলা পরিষদের সামনে বাপের ছোট্ট একটি চায়ের দোকান থেকে তার উৎপত্তি। কখনো বাদাম বিক্রি কখনো টেনিস বল টোকানো এই আককাস এখন ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের দু’বারের সাধারণ সম্পাদক। তার হাতে এখন কুক্ষিগত ঝালকাঠি প্রেসক্লাব। যখন যাকে যে পদে বসাবেন তিনি সেই পদেরই অধিকারী হবেন। যার কারনে প্রেসক্লাবের কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। এমনকি তার মোটর সাইকেল ড্রাইভারকেও প্রেসক্লাবের সদস্যপদ প্রদান করলেও কেউ টু শব্দটিও করতে সাহস পায়নি। আককাস বাসসেরও জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি জিয়াউল হাসান পলাশ ও যমুনা টিভির প্রতিনিধি দুলাল সাহা তার কৌশলী রোষানলে পড়েন। নিম্মমানের ঠিকাদারী কাজের ও কাজ না করে বিল উঠিয়ে নেয়ার সংবাদ প্রকাশ করায় ওই ঠিকাদারকে পরামর্শ দিয়ে চাঁদাবাজি মামলা করিয়ে জেলহাজত খাটিয়েছেন। দৈনিক যায়যায়দিন প্রতিনিধি ও একুশে টিভির প্রতিনিধি আজমীর তালুকদারকে রাজাপুরে একটি সংবাদ প্রকাশের ঘটনা সাজিয়ে তার নিকটাত্মীয় ব্যক্তিকে বাদী সাজিয়ে ৩০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করায়। এ ঘটনায় আসামি করা হয় আজমীর তালুকদারের স্ত্রীকেও। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ওকালতি করায় আদালত পাড়াতেও বিশেষ প্রভাব রয়েছে আক্কাসের। তার তদবির করা মামলায় সাংবাদিক আজমীর তালুকদারকে ১৫দিন এবং তার স্ত্রীকে ৭দিন হাজতবাস করতে হয়। সংবাদ প্রকাশের কারনে সাংবাদিকদের উপর হামলা, মামলা ও হয়রানি চালানোর প্রতিটি ঘটনার পেছনেই বাসস সাংবাদিক আক্কাসের হাত থাকার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সর্বত্রই তার কুটকৌশলের কারণেই ভয়ঙ্কর খেসারত দিতে হয় সাংবাদিকদের।

সংবাদ প্রকাশ হলেই সাংবাদিক আক্রান্ত 

কতিপয় সংবাদকর্মীকে বছর দুয়েক আগের ঘটনা। শহরের বিশ্বরোডের এক ধনাঢ্য পুত্র তার মাকে গরুঘরের পাশে বছরের পর বছর থাকতে দিয়ে মানবতা লঙ্ঘিত করছিল। এমন খবরে ঝালকাঠির দিনকালের প্রতিনিধি ওমর ফারুক, যায়যায়দিনের তৎকালীন প্রতিনিধি এমদাদুল হক স্বপনসহ ৪-৫ জন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান। খবর পেয়ে আককাস গৃহকর্তাকে বাঁচাতে তাকে বাদি সাজিয়ে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করাতে সক্ষম হন। পরে তদন্তে চাঁদাবাজির ঘটনা প্রমানিত হয়নি। এদিকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি এসএম রেজাউল করিমসহ ২-৩ জন সাংবাদিককে অপসাংবাদিক আখ্যা দিয়ে ঝালকাঠি ছাড়তে হুলিয়া হুলিয়া পর্যন্ত জারি করা হয়েছিল। দৈনিক দক্ষিনাঞ্চলের তৎকালীন প্রতিনিধি এজিএম মিজানুর রহমানকে প্রকাশ্যে আইনজীবি সমিতির হলরুমে লাঞ্ছিত করে তাকে দুটি মামলা দিয়ে হয়রাণী করে এই আক্কাস সিকদার। দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধি এসএম রাজ্জাক পিন্টুকে অপসাংবাদিক আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধেও মামলা করাতে উদ্যত হয়। মোহনা টিভি ও আলোকিত বাংলাদেশ’র প্রতিনিধি রুহুল আমিন রুবেল, বশির উদ্দিন খলিফাকে একাধিক চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে ও মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ফেসবুকে মিথ্যা, মনগড়া ও কুরুচিপূর্ণ লেখা লিখিয়ে হয়রানি ও অর্থদন্ড করিয়ে চলছে। সর্বোপরি এই আক্কাস সিকদারের কবলে ঝালকাঠির অগনিত সাংবাদিক হয়রানি ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগী অধিকাংশ সাংবাদিক মানসম্মানের ভয়ে প্রতিবাদটুকুও করেন না, বরং মুখ বুজে সহ্য করাকেই শ্রেয় মনে করেন। তার নাকি হাত অনেক লম্বা। কখনো আইনজীবি কখনো সাংবাদিক হিসেবে ঝালকাঠি জেলার সর্বত্র বেপরোয়া তদবির বাণিজ্যও চলে তার। এছাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনও তাকে সমীহ করে থাকে। প্রেসক্লাব সেক্রেটারী আক্কাসের নামে বিভিন্ন ক্লিনিক, ইটভাটা সমিতি, কাজী সমিতি, বালি উত্তোলনকারী, আড়ৎপট্টি, টমটম, অটো, বাস মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন স্পট থেকে দেদারছে মাসোয়ারা উত্তোলন হওয়ার খবর জানা গেছে। সাংবাদিক হয়রানির নেপথ্য ইন্ধনদাতা হিসেবে চিহ্নিত আক্কাস সিকদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগিরা প্রচার করে বেড়ান তার হাত অনেক লম্বা। নেতা তার পরামর্শ ছাড়া নাকি একটা পদক্ষেপও নেন না, জেলা প্রশাসন তার কাছেই জিম্মি থাকে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দল-সংগঠনের নেতা কর্মিরাও নাকি সিকদারের ভয়ে তটস্থ থাকেন। তিনি কখন কার বিরুদ্ধে কথা লাগান, উস্কানী দেন তা নিয়ে সর্বদাই তারা আতঙ্কে ভোগেন।

কেড়ে নেয়া হয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদও 

আক্কাসের একনায়কতন্ত্রী মনোভাব, সাংবাদিকদের প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ, অসাংবাদিকতাসুলভ কর্মকান্ডসহ নানারকম দালালির প্রতিবাদ করায় মনগড়া নানা অভিযোগ তুলে সমকালের জিয়াউল হাসান পলাশ, যমুনা টিভির দুলাল সাহা (পুনরুদ্ধার), দৈনিক মতবাদের তৎকালীন প্রতিনিধি একেএম মোতালেব হোসেন, দেশটিভির মনির হোসেন (মরহুম), একুশে টিভির আজমীর হোসেন তালুকদার, ডিবিসি টেলিভিশনের আল আমিন তালুকদার প্রমূখের সদস্যপদ কেড়ে নেয়া হয়েছে। আক্কাসের আজ্ঞাবহরাই কেবল সেখানে সাংবাদিকতায় টিকে থাকতে পারছেন বাকিরা আউট। এদিকে প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য দৈনিক শতকন্ঠের জাহাঙ্গীর হোসেন মনজু ও দৈনিক অজানা বার্তার সম্পাদক এসএমএ রহমান কাজল উভয়েই সদস্যদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়। সাধারন সদস্যরাও এ দু”জনকে প্রেসক্লাবের দায়িত্বশীল পদে আশা করেন। ফলে প্রতিবারের নির্বাচন পূর্ব সময়ে আক্কাস বিশ্বাস এমনই পরিবেশ সৃষ্টি করেন যেখানে মঞ্জু-কাজলদের মতো নির্ভেজাল সিনিয়র সদস্যরা নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন। এছাড়া একজন সাংবাদিককে দিয়ে আরেকজনের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে এক সংগঠনের বিরুদ্ধে আরেক সংগঠনকে লাগিয়ে দিয়ে আক্কাস মজা লুটতেই বেশি পছন্দ করেন বলে চাউর আছে। সম্প্রতি ঝালকাঠি রিপোর্টার্স ইউনিটি নামে একটি সংগঠন গড়ে উঠতেই রাজাপুরে তার ইন্ধনে রিপোর্টার্স ইউনিটি নামে পাল্টা সংগঠন বানিয়ে দেয়া হয়। ফলে পেশাগত দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে বিদঘুটে পরিবেশের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন। সম্প্রতি ঝালকাঠিতে ঘটে যাওয়া তিন সাংবাদিককে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কি কারনে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে জানতে চাওয়া হলে বশির জানান, তার নিজ আইডিতে গত ৩০ মার্চ সকালে ‘করোনার মধ্যেও সুদ ব্যবসায়ী হাবিলের অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসি’ শিরোনামে একটি পোষ্ট করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিল স্থানীয় সাংবাদিক আক্কাস সিকদারকে ম্যানেজ করে কাঠপট্টিতে নিয়ে যান। রিংকু নামের এক যুবককে দিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে নেয়। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আমার ওপর চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর করে। খবর পেয়ে মোহনা টিভির প্রতিনিধি রুহুল আমিন রুবেল ও বিএমএসএফ’র সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও লাঞ্ছিত করে ভিডিও চিত্র ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।

 

সুত্র দিকদর্শন

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন










© All rights reserved © 2025 pirojpursomoy.com
Design By Rana